• সর্বশেষ আপডেট

    পুলিশ কনস্টেবলের বাড়িতে অনশনে তরুণী, ছেলের কয়বার বিয়ে জানেন না মাও

     

    স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে পুলিশ কনস্টেবলের বাড়িতে অনশনে বসেছেন এক তরুণী। আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামে সিআইডি পুলিশের কনস্টেবল সোহেল রানার বাড়িতে ওই নারী অনশন শুরু করেছেন। 

    সোহেল রানা বর্তমানে বরগুনা জেলা সিআইডি পুলিশে কর্মরত। ওই তরুণী জানিয়েছেন, এখানে এসে প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পারেন ওই কনস্টেবল এর আগেও আটটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী বাড়িতে থাকেন, ১১ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তরুণীর দাবি, ১০ বছর আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সোহেল রানার সঙ্গে পরিচয়। 

    এরপর দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক চলে। এক বছর এক মাস আগে ঢাকার রামপুরায় কাজি অফিসে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন তাঁরা। কাবিনে সাক্ষী হিসেবে মো. রাসেল নামে সোহেল রানার এক বন্ধু স্বাক্ষর রয়েছে। বিয়ের সময় সোহেল রানার পোস্টিং ছিল জয়পুরহাট জেলায়। জয়পুরহাটে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন তাঁরা।

     পরে ঢাকা ও সর্বশেষ দুই মাস আগে বরগুনায় বাসা ভাড়া নেন। গত ২৬ এপ্রিল সোহেল রানা তাঁকে বরগুনার ভাড়া বাসায় একা রেখে পালিয় যান। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না ওই তরুণী। পরে সোহেল রানার বাবা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান। রফিকুল ইসলাম ছেলের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এর মধ্যে ডাকযোগে তরুণীকে ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়ে দেন সোহেল রানা।

    এ বিষয়ে বরগুনা সিআইডি কার্যালয়ে সোহেল রানার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তরুণী। আজ সকালে সোহেল রানার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন তিনি। প্রথমে পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকতে দেয়নি। দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে একটি কক্ষে বসতে দেওয়া হয়। তবে তরুণী নাম পরিচয় দিতে রাজি হননি। পরিচয় হিসেবে তিনি শুধু বলেন, তাঁর বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কুমিল্লাতেই বড় হয়েছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এদিকে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে তরুণীর অনশনের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর সোহেল রানার বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। সোহেল রানার মা জেবুনের নেছা দরজা বন্ধ করে একটি কক্ষে বসে আছেন।

     তিনি বলেন, ‘সকালে একটি মেয়ে বাড়িতে এসে আমার ছেলের বউ বলে পরিচয় দেয়। আমরা প্রথমে বিশ্বাস করিনি, পরে সে আমাদের ছেলের সঙ্গে একাধিক ছবি দেখায়। আমি অসুস্থ, আমি এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’ জেবুনের নেছা আরও বলেন, সোহেল রানা তিন মাস পূর্বে বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও ১১ বছরের একটি কন্যা রয়েছে। ঈদের পরদিন সোহেল রানার স্ত্রী তাঁর মেয়েকে নিয়ে চাঁদপুরে বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। এখনো আসেননি। আজ সকাল থেকে সোহেল রানার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তিনি জানান। তবে তিনি জানান, তিন দিন আগে ছেলে তাঁকে ফোন করে জানান, বড় বিপদে পড়েছেন, একটি মেয়ে বিপদে ফেলে তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছেন।

    বর্তমানে তিনি মেয়েটিকে ডিভোর্স দিয়েছেন। ছেলের একাধিক বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে জেবুনের নেছা বলেন, এর আগে ছেলে কয়েকটি বিয়ে করেছে, বিচ্ছেদও হয়েছে। তবে সোহেল রানা ঠিক কয়টা বিয়ে করেছেন সেটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। 

    সোহেল রানার বাবা রফিকুল ইসলাম সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত করপোরাল অফিসার। বর্তমানে তিনি একটি সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানিতে কর্মরত। তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বুড়িচং থানার ওসি মাকসুদ আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ওই তরুণীর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে বরগুনা জেলা সিআইডি পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কনস্টেবল সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক নারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’সোহেল রানা বর্তমানে কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে সে ছুটিতে যায়। ছুটি শেষ হলেও এখনো কর্মস্থলে ফেরেনি।

    প্রকাশিত: শুক্রবার ১৪ মে ২০২২