নিজের তৈরি মই দিয়েই পালিয়েছে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী আবু বকর সিদ্দিক!
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গাজীপুরঃ- যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী আবু বকর সিদ্দিক কারাগারের ভেতরে বসে নিজেই মই তৈরি করেন। এরপর শ্রমিকের বেশে মইটি কাঁধে নিয়ে প্রধান ফটক পার হয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে যান। গায়ে কয়েদির পোশাক না থাকায় তাকে বাধা দেননি কারারক্ষীরা।
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কয়েদি পালানোর ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপারসহ ১৬ জনের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ৪২ জন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষ্য ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তদন্ত কমিটি। তিন সপ্তাহ তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েদি পালানোর ঘটনা ই-মেইলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয় পরদিন। ঘটনার দিন কারাগারের ৪৮টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে ২৭টি অচল ছিল। সার্চ লাইটও ছিল অকেজো।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- ৬ আগস্ট সকাল সোয়া ১১টায় কয়েদি আবু বকর সিদ্দিক কাঁধে একটি মই নিয়ে সাধারণ পোশাকে কারাগারের ব্রহ্মপুত্র ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই সময় আশপাশে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা ঘোরাফেরা ও গল্প করছেন।
মূল ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষীর সামনে দিয়ে মই নিয়ে গেলেও তিনি বাধার সম্মুখীন হননি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মই পড়ে থাকতে দেখে একজন কারারক্ষী মইটি কারাগারের অনুসন্ধান কেন্দ্রে পাঠান। ওই সময় সেখানে প্রধান কারারক্ষী বসা ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়- অনুসন্ধান কেন্দ্রে থাকা প্রধান কারারক্ষী আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা সহকারী প্রধান রক্ষী আহাম্মদ আলী, গোয়েন্দা কারারক্ষী হক মিয়া কেউই মইটি এভাবে রাখাসহ কয়েদির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কিছু জানাননি। একজন কয়েদি কম থাকায় দুপুরে গণনায় তা ধরা পড়লেও সর্বপ্রধান কারারক্ষী বিষয়টি জেলার বা জেল সুপারকে জানাননি।
সন্ধ্যায় তালা বন্ধ করার সময় গণনায় একজন কয়েদি কম পড়লে তখন বিষয়টি ডেপুটি জেলার ও জেলার জানতে পারেন।
তদন্ত কমিটির মতে, পুরো ঘটনায় কারাবিধি ও সরকারি চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এ ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগমসহ ২৫ জনকে দায়ী করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কারাবিধি ও সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে দোষীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, কয়েদি আবু বকর সিদ্দিক মই নিয়ে পালাতে সক্ষম হওয়ায় যথাযথ নিরাপত্তার অভাব যে ছিল, তা প্রমাণিত। কারাগারের সবাই দায়িত্ব ও কর্তব্যে চরম অবহেলা করেছেন ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কমিটি কারাগারের সব সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রাখা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও এসব ক্যামেরার ফুটেজের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে বলেছেন।
এ ছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো অবকাঠামোগত ত্রুটি থাকলে মেরামত বা সংস্কারের ব্যবস্থা করা, কয়েদি পোশাক পরা নিশ্চিত করাসহ মোট ১৬টি সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জানান, জেল সুপার ও জেলার যদি কারা অভ্যন্তরে আরো তদারকি করতেন এবং ডেপুটি জেলাররা যদি তাদের নির্দিষ্ট এলাকাগুলো নিয়মিত ঘুরতেন এবং কারারক্ষীরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে কারাগারের ভেতরে মই থাকত না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছি। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে ও শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে, ২০১৫ সালের ১৩ মে একই কাজ করেছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। ওই সময় তিনি সেল এলাকায় সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও কখনো কয়েদির পোশাক পরতেন না তিনি।
এ ব্যাপারে নজরদারি বা তাকে কয়েদি পোশাক পরতে বাধ্য করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশিত: শনিবার ২৯, অগাস্ট ২০২০
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কয়েদি পালানোর ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপারসহ ১৬ জনের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ৪২ জন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষ্য ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তদন্ত কমিটি। তিন সপ্তাহ তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েদি পালানোর ঘটনা ই-মেইলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয় পরদিন। ঘটনার দিন কারাগারের ৪৮টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে ২৭টি অচল ছিল। সার্চ লাইটও ছিল অকেজো।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- ৬ আগস্ট সকাল সোয়া ১১টায় কয়েদি আবু বকর সিদ্দিক কাঁধে একটি মই নিয়ে সাধারণ পোশাকে কারাগারের ব্রহ্মপুত্র ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই সময় আশপাশে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা ঘোরাফেরা ও গল্প করছেন।
মূল ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষীর সামনে দিয়ে মই নিয়ে গেলেও তিনি বাধার সম্মুখীন হননি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মই পড়ে থাকতে দেখে একজন কারারক্ষী মইটি কারাগারের অনুসন্ধান কেন্দ্রে পাঠান। ওই সময় সেখানে প্রধান কারারক্ষী বসা ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়- অনুসন্ধান কেন্দ্রে থাকা প্রধান কারারক্ষী আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা সহকারী প্রধান রক্ষী আহাম্মদ আলী, গোয়েন্দা কারারক্ষী হক মিয়া কেউই মইটি এভাবে রাখাসহ কয়েদির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কিছু জানাননি। একজন কয়েদি কম থাকায় দুপুরে গণনায় তা ধরা পড়লেও সর্বপ্রধান কারারক্ষী বিষয়টি জেলার বা জেল সুপারকে জানাননি।
সন্ধ্যায় তালা বন্ধ করার সময় গণনায় একজন কয়েদি কম পড়লে তখন বিষয়টি ডেপুটি জেলার ও জেলার জানতে পারেন।
তদন্ত কমিটির মতে, পুরো ঘটনায় কারাবিধি ও সরকারি চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এ ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগমসহ ২৫ জনকে দায়ী করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কারাবিধি ও সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে দোষীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, কয়েদি আবু বকর সিদ্দিক মই নিয়ে পালাতে সক্ষম হওয়ায় যথাযথ নিরাপত্তার অভাব যে ছিল, তা প্রমাণিত। কারাগারের সবাই দায়িত্ব ও কর্তব্যে চরম অবহেলা করেছেন ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কমিটি কারাগারের সব সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রাখা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও এসব ক্যামেরার ফুটেজের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে বলেছেন।
এ ছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো অবকাঠামোগত ত্রুটি থাকলে মেরামত বা সংস্কারের ব্যবস্থা করা, কয়েদি পোশাক পরা নিশ্চিত করাসহ মোট ১৬টি সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জানান, জেল সুপার ও জেলার যদি কারা অভ্যন্তরে আরো তদারকি করতেন এবং ডেপুটি জেলাররা যদি তাদের নির্দিষ্ট এলাকাগুলো নিয়মিত ঘুরতেন এবং কারারক্ষীরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে কারাগারের ভেতরে মই থাকত না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছি। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে ও শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে, ২০১৫ সালের ১৩ মে একই কাজ করেছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। ওই সময় তিনি সেল এলাকায় সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও কখনো কয়েদির পোশাক পরতেন না তিনি।
এ ব্যাপারে নজরদারি বা তাকে কয়েদি পোশাক পরতে বাধ্য করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।