গাজীপুরে কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’র ১২ জন অস্ত্রসহ আটক
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গাজীপুরঃ- গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় দু’টি পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’র পৃষ্ঠপোষক বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পি ও নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জন সক্রিয় সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয় (র্যাব)-১।
রোববার (৬ জুন) দুপুরে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান।
তিনি বলেন, গত রাতে (শনিবার) র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তাদের আটক করে।
আটক কৃতদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, দুটি রামদা, তিনটি লােহার পাইপ ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়। ফুচকার দোকানে বসার জায়গা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে ডি কোম্পানির সদস্যরা। সেই সূত্র ধরে দুটি বাড়িতে ও একটি টেইলার্সে হামলা চালানাে হয়। এতে চারজন গুরুত্বর আহত হয়।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন জানান , ২০১৩ সালে পড়াশােনা শেষে দেশে ফিরে তিন বছর পর ( ২০১৬ সালে ) ‘ ডি কোম্পানি ' বা ডিয়ারিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন বাপ্পি। এর দুই বছর পর ফেসবুক গ্রুপ বা ম্যাসেঞ্জারে গ্রুপ খুলে অপরাধ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠিত করা হয় একটি 'লােগাে '।
তার গ্রুপে ৫০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। এসব সদস্যের প্রতি সপ্তাহে তিনশ থেকে চারশ টাকা করে দেয়া হতাে। আর প্রতি মাসে অটোরিক্সা থেকে চাঁদাবাজি, মাদক, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করতো।
র্যাব মুখপাত্র আরও জানান, ২০০৭ সালে তার ( বাপ্পি ) মা মারা যান। এরপর তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। ২০১৭ সালে বাপ্পি অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে আটক হন। সেই মামলায় ছয় মাস জেলহাজতে ছিলেন। তার ছােটভাই পাঙ্কু এই গ্রুপের প্রধান পৃষ্ঠপােষক। মাদক মামলায় তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। আর ‘ ডি কোম্পানির দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেন মইন আহমেদ নীরব। তার বাড়ি চাঁদপুর। এই নীরব এলাকায় ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
রবিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ৫ জুন রাতভর রাজধানীর উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ ডি কোম্পানির কিশাের গ্যাং গ্রুপের পৃষ্ঠপােষক রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি ও মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরবসহ মােট ১২ জনকে আটক করে র্যাব -১ ।
তারা হলেন তানভীর হােসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর, পারভেজ ওরফে ছােট পারভেজ, তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন, রাজিব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব, সাইফুল ইসলাম শাওন, রবিউল হাসান, শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল, ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন, মাহফুজুর রহমান ফাহিম, ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন।
র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১ জুন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সেখানে বসে থাকা তুহিন ও তুষার নামে দুই যুবককে এলােপাতাড়ি ধারালাে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানির গ্যাং গ্রুপের দুই সদস্য গুরুতর জখম করে। পরে এই ঘটনা বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৩ জুন রাতে একই এলাকার একটি টেইলর্সের দোকানসহ বিভিন্ন বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে টেইলার্সের দোকানি মিসেস রূপালী তার স্বামী আরজু মিয়া ও অন্য একজন সুজন মিয়াকে কুপিয়ে যখম করে। এঘটনায় ভুক্তভােগী টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
র্যাব -১ ছায়া তদন্ত করে দুর্ধর্ষ কিশাের গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং কোম্পানির পৃষ্ঠপােষক ও লিডার নীরবসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই গ্রুপটি উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই, চুরি, মারামারি, মাদকের কারবার হুমকি - ধামকিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল।
তিনি বলেন, আটক আসামিরা গ্রুপের অনেক সদস্যদের নাম - পরিচয় বলেছে। আমরা তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যদের ওপর র্যাবের গােয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। র্যাব কমান্ডার বলেন, বর্তমান সময়ে কিশাের গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলােচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। এবিষয়ে সন্তানদের ওপর বাবা - মাসহ পরিবারের সদস্যদের নজরদারি রাখা খুর জরুরি। সন্তানরা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে, ফেসবুক বা ইন্টারনেটে কোনসব গ্রুপের সাথে জড়িত সেসবের ওপর নজরদারি করা প্রয়ােজন।
নয় তাে ছােটখাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারামারি - খুনােখুনি করে কিশাের বয়সেই অপরাধী হয়ে উঠতে পারে কিশােররা।
About দিগন্ত নিউজ
